কার্বোহাইড্রেটের শরীর বৃত্তীয় ভূমিকাঃ
- শরীরে শক্তি সরবরাহ করাই কার্বোহাইড্রেট এর প্রধান কাজ। প্রতি গ্রাম কার্বোহাইড্রেট 4 কিলো ক্যালরি শক্তি সরবরাহ করে। শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরে তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং গ্লুকোজ পরিপাকতন্ত্রের বাইরে রক্তে শোষিত হয়। রক্তের মাধ্যমে গ্লুকোজ, পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুগুলোতে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তি সরবরাহ করে। বেশিরভাগ কোষ শক্তির জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করে থাকে। দেহে কার্বোহাইড্রেট/ শর্করা যকৃত ও পেশিতে গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চিত থাকে। যা কোন কারনে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে বা উপস থাকাকালীন সময়ে প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত দেহে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
- মস্তিষ্ক ও স্নায়ুবিক পেশীর জন্য গ্লুকোজ অপরিহার্য। গ্লুকোজ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একমাত্র শক্তি সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে।
- কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন এর ক্ষয় রোধ করে করে। প্রয়োজনীয় ক্যালরি চাহিদার চেয়ে কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে,দেহে শক্তির প্রয়োজনে, প্রোটিন/ ফ্যাট জারিত হয়ে শক্তি সরবরাহ করে। ফ্যাট এর জারনের ফলে কিটোন উৎপন্ন হয়। কিটোন গুলো এসিডিক যা আংশিক চর্বি দ্বারা গঠিত। যদি ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট/ শর্করা কম থাকে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা না হয় অথবা ক্রাশ ডায়েট/কিটো ডায়েট করা হয়, সেক্ষেত্রে ফ্যাট বা প্রোটিনের ভাঙ্গন স্বাভাবিকভাবে বেশি হয়। কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে চর্বি ভেঙে ক্রমাগত কিটোন সৃষ্টির ফলে রক্তে কিটো এসিড এর মাত্রা বেড়ে, কিটোসিস বা এসিডোসিস দেখা দেয়। কার্বোহাইড্রেট কিটোসিস বিরোধী ভূমিকা পালন করে।
- জটিল শর্করা যেমন:- সেলুলোজ, পেকটিন মল তৈরিতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ ত্বরান্বিত করে।
- পেকটিন, সেলুলোজ প্রভৃতি কার্বোহাইড্রেট রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
- দুধের শর্করা ল্যাকটোজ, ক্যালসিয়াম পরিশোষনে সাহায্য করে।
- গ্লুকোজ হতে উৎপন্ন গ্লুকো ইউরোনিক এসিড বিভিন্ন ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় বিষাক্ত উপাদান এর সাথে যুক্ত হয়ে মূত্রের মাধ্যমে দেহ ,হতে নিষ্কাশিত হয়। এভাবে শর্করা দেহ নির্বীষকরণে ভূমিকা রাখে।
- এমাইনো শর্করা গ্লুকোসএমাইন অস্থিসন্ধি র সুস্থতা রক্ষা করে।
- রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ/ অপাচ্য শর্করা বৃহদান্ত্রের সুস্থতা ও মল নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
- গ্লাইকোজেন, হৃদপেশির শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস।
কার্বোহাইড্রেট এর অভাব জনিত লক্ষণ
- দেহে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় ।
- কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে চর্বি ভেঙে কিটো এসিড তৈরি করে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ একটি অবস্থা এসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে।এ অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এসিডোসিসের কারণে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
- মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হলো গ্লুকোজ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙে তৈরি হয়। মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করতে পারে না। তবে দীর্ঘদিন শর্করার অভাবে মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহারে সক্ষম হয়। তবে শর্করার অভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
- আমাদের দেহে প্রোটিন ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। প্রোটিন বা ফ্যাট জারণের ফলে কিটো এসিড সৃষ্টি হয়, ফ্যাটি এসিড বা ফ্যাট যত বেশি জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে ততবেশি কিটো এসিড উৎপন্ন হয়। কিটো এসিডের আধিক্যের ফলে এসিডোসিস দেখা দেয়। এর ফলে অনেক সময় মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আরো অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কার্বোহাইড্রেট এর আধিক্যজনিত কুফল
- অধিক সুক্রোজ গ্রহণের ফলে দাঁতের ক্ষয় রোগ দেখা দেয়।
- কার্বোহাইড্রেট বেশি গ্রহণের ফলে বেশি পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসরণ হয় এবং কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিন ফ্যাট বা চর্বি জমতে সহায়তা করে। বেশি পরিমাণ ইনসুলিন উপস্থিতিতে বেশি পরিমাণে ফ্যাট শরীরে জমে শরীর মেদবহুল হয়ে পড়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণঃ
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরির ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ শর্করা থেকে গ্রহণ করা উচিত। অনেক পুষ্টিবিদদের মতে মোট ক্যালরির শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট হতে গ্রহণ করা জরুরি। তবে কোনোভাবেই শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ক্যালোরি কার্বোহাইড্রেট হতে গ্রহণ করা যাবে না। The National Academy of Sciences, মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ঠিক রাখতে দৈনিক ১৩০ গ্রাম (৫২০ ক্যালোরি) শর্করা গ্রহণের পরামর্শ দেয়। যা মস্তিষ্কের দৈনন্দিন গ্লুকোজ তৈরি করার জন্য ন্যূনতম পরিমাণ শর্করা।
কিছু খাদ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমান এবং ক্যালরি মূল্যঃ
তালিকা | পরিমান | কার্বোহাইড্রেটের পরিমান | ক্যালরি |
---|---|---|---|
ভাত | ৪৫গ্রাম | ৩৭ গ্রাম | ১৭০ |
লাল চালের ভাত | ১ কাপ | ৩২ গ্রাম | ১৫০ |
গম | ১০০ গ্রাম | ৭২ গ্রাম | ৩৪০ |
ভুট্টা | ১০০ গ্রাম | ২১ গ্রাম | ৯৬ |
আলু | ১০০ গ্রাম | ২০.১ গ্রাম | ৮৭ |
মিষ্টি আলু | ১০০ গ্রাম | ২০.১ গ্রাম | ৮৬ |
পুরো খাঁটি ওট | ১০০ গ্রাম | ৬৬.৩ গ্রাম | ৩৮৯ |
মুড়ি | ২৫গ্রাম | ২১ গ্রাম | ১০৪ |
চিনি | ১ টেবিল চামচ | ১০০ গ্রাম | ৩৮৭ |
আপেল | মাঝারি ১ টা | ১৩.৮ গ্রাম | ৫২ |
কলা | ১০১ গ্রাম | ৯৩% | ৭২ |
স্ট্রবেরি | ১০০ গ্রাম | ৭ গ্রাম | ৩২ |
আঙুর | ১৫১ গ্রাম | ২৭.৩ গ্রাম | ১০৪ |
গাজর | ১০০ গ্রাম | ২১ গ্রাম | ৯৬ |
খেজুর | ৩৫ গ্রাম | ৭৮ গ্রাম | ২৯১ |
আম | ১০০ গ্রাম | ৫১ গ্রাম | ২১০ |
পেঁপে | ১৫০ গ্রাম | ৪৩ গ্রাম | ১৭৭ |
কমলালেবু | ১০০ গ্রাম | ৩৫ গ্রাম | ১৩৫ |
আখের রস | ১কাপ | ৯৩ গ্রাম | ৩৬০ |
গুড় | ১কাপ | ৭৪ গ্রাম | ২৯০ |
শাকসব্জী | ২কাপ | ২৪ গ্রাম | ১৯২ |
মসুর ডাল | ১কাপ | ১২০ গ্রাম | ৬৯০ |
মটর | ১/২কাপ | ৫ গ্রাম | ৫৩ |
কাঠ বাদাম | ১টি | ৬৪ গ্রাম | ১৭৩৭ |
আখরোট | ১কাপ | ১৪ গ্রাম | ৬৫ |
চিনাবাদাম | ৬ গ্রাম | ৩ গ্রাম | ১২০ |
চিয়া বীজ | ৩০ গ্রাম | ৩৯ গ্রাম | ৪৫০ |
কুমড়োর বীজ | ১কাপ | ৩৪ গ্রাম | ২৮৫ |
মধু | ২ টেবিল চামচ | ২২ গ্রাম | ১২৮ |